এই মুহূর্তে আমি ও কবিতা
__________________________________________________________
- স্বীকারোক্তি
ধরা।--এই শব্দ দিয়ে পাঁচটি বাক্য লিখে
এতোটা বছর গেলো বইমেলা ধরতে শিখিনি,
হয়তো লেখক হওয়া হবে না আমার।
নাদানের মতো তবু লিখে রাখি ছাইপাঁশ। মলাটবিহীন লেখালেখি
--তাদেরও তো শীত লাগে, গরম-কাপড় লাগে, রঙিন জ্যাকেট হলে ভালো।
এরকম বিবেচনা অলস চাদর ছেড়ে বেরোতে শেখেনি।
কেবল পাখির মতো ডিম-পাড়া, প্রাকৃতিক আনন্দই সার।
কী করে অমলেট ভেজে খেতে হয়
আজও শেখা হলো না আমার।
______________________________________________________
১.
এই মুহূর্তে কবিতার তত্ত্ব লইয়া ভাবিতে ইচ্ছা করিতেছে না। কেননা, ইচ্ছা হইল মনের ব্যাপার, আরোপিত দায়িত্বপালনের নহে। আমার মন বলিতেছে, ভাবিয়া কাজ নাই, গল্পে মাতিয়া থাক। তবে, গল্পগুজবের খড়খড়ি দিয়া ভাবনা যদি উঁকিঝুঁকি মারে, -বারণ করিও না। আমরা জানি, দাবাখেলায় হাত দিয়া চালিতে হয়; তাই বলিয়া দাবাখেলা হাতের খেলা নহে। তদ্রুপ, লেখালেখিও কাগজ-কলমের ঘষাঘষি নহে।
অতএব, ভাবনাকে ‘না’ বলিয়া গল্পই বলি।
২.
একবার, কাব্যমূল্য নিরূপণ লইয়া এক শিক্ষকের সঙ্গে আমার কিঞ্চিৎ মতপার্থক্য ঘটিয়াছিল। মাননীয় সেই অধ্যাপক কায়মনোবাক্যে একজন প্রবন্ধগ্রস্ত ভদ্রলোক। পক্ষান্তরে, আমি হইলাম নগণ্য কবিতাপ্রেমিক মাত্র। ভাগ্যক্রমে আমি তাঁহার হাজিরা খাতায় ঢুকিয়াছিলাম বলিয়াই হয়তো তিনি কিি দধিক আহতবোধ করিয়াছিলেন। ফলত, তিনি অলংকারসম্মতভাবে চমৎকার একটি খোঁচা আমাকে উপহার দিয়াছিলেন; বলিয়াছিলেন -‘ডিম পাড়তে পারি না বলে যে অমলেট খেতে জানি না, -তা তো নয়!’ তাঁহার রসনাবোধে আমি এতই তৃপ্তি অনুভব করিলাম যে, তর্ক করিয়া তাহাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করি নাই।
অতএব, মনের কথা মনেই রাখিয়া দিলাম। বলিতে পারিলাম না -আমার জানা মতে, পৃথিবীর ইতিহাসে কোন মুর্গিই অমলেট খাইবার উদ্দেশ্যে ডিম পাড়ে নাই। সে ডিম পাড়িয়াছে প্রকৃতির নিয়মে, সে ডিম পাড়িয়াছে প্রাকৃতিক আবেগে। সেই আনন্দ স্বতন্ত্র আনন্দ; তাহার কোন বিকল্প নাই। সেই ডিম লইয়া কে পৌচ করিয়া খাইলেন, কে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক শাদা অংশ সেবন করিয়া কুসুম পরিহার করিলেন, -তাহা জানিবার মতো জ্ঞানস্পৃহা মুর্গির নাই। কিন্তু, মুর্গিই কেবল জানে, ডিমপাড়া কী জিনিস! ভাবাভাবির ফল যে সচরাচর সুমিষ্ট হয় না, আশা করি, পাঠক তাহা টের পাইয়াছেন।
_______________________________________________________
- ছেলেটা কোথায় গেলো
ছেলেটা কোথায় গেল, এখন দেখি না কেন তাকে ?
বুক জুড়ে এ নগরে এতো লোকেদের ভীড়
পাখি-দম্পতিহীন বহুতল মানুষের নীড়,
তবু কেন সারাক্ষণ মনে হয় কী যেন কী নেই !
একদিন জল ছিল, কাজলের টান ছিল চোখে
একদিন বৃক্ষ ছিল, ফুল ছিল আঙুলের নখে
নদীতে জোয়ার এলে ডালপালা মেলে দিত নদী
জলের সখির সঙ্গে এসে যেত কতো মাছরাঙা !
এখন মাটির নিচে সমাহিত সেই সব মাছের কঙ্কাল
একদিন গাছ ছিল, শাখাপ্রশাখার হাতছানি পেয়ে এসেছিল পাখি
এখন মাছের কাঁটা ক্যাকটাস হয়ে গেছে বেলকনির টবে।
সংসারের খড়কুটো ঠোঁটে নিয়ে উড়ে এসেছিল, পেড়েছিল নীল ডিম,
ছেলেটা হা ছুঁয়েছিল; শেফালির বোঁটায় রক্তিম
লজ্জাটুকু ছুঁয়ে দেখেছিল, ডুব দিয়ে দেখেছিল জলের আড়ালে মাছ, ঘাস,
শিমুলের লাল। সেগুন গাছের পাতা নেই আজ, বাটালির ফুলে
এখন পাখির খাটে ডিম পাড়ে ডানাহীন মেয়েমানুষেরা।
মেঘে নয় বিজ্ঞাপনে ঢেকে গেছে আমার আকাশ,
অনেক বাল্বের চাঁদ; এখন জ্যোৎ¯œায় বুক হাতছানি দেয়
বহুতল-ভবনের ফাঁকে।
ছেলেটা কোথায় গেল ! এখন দেখি না আর তাকে।
এখন রেলের বিটে ওড়ে না তো এক-আনার রূপচাঁদা ঘুড়ি,
মাদারবাড়ির বুড়ি মারা গেছে বহুকাল আগে। ছেলেটা কোথায় গেল
কে পাঠালো বনবাসে তাকে ? নাকি নিজে নিজে কোনো ফড়িঙের
পিছু নিতে নিতে
উড়ে গেছে দূরে কোনো উত্তর পাহাড়ে নাকি চোখের আড়ালে
বড় হতে গিয়ে আজ বুড়ো হয়ে গেছে ! কে জানে কোথায় থাকে !
কেউ কি দিয়েছে দুঃখ তাকে ?
রিকশার পেছনে ঝুলে গিয়েছিল নন্দনকানন; ফিরে এসে
মার্বেল হারানো কষ্টে বসেছিল রেলবিটে একা।
যদি কেউ পাও তার দেখা, তাকে বোলো,
এখন আকাশে মেঘ, উঠোনে বর্ষার জল; অপেক্ষায় থৈ থৈ ঘরে
রুলটানা কাগজের পৃষ্ঠা হাতে নিয়ে
নৌকা বানাতে গিয়ে নীলোফার ছেলেটাকে আজও খোঁজ করে।
২৮.৭.১৩
______________________________________________________
৩.
ভাগ্যিস, পঞ্চকোষের বদান্যতায় কবিতা নামক পদার্থের উদ্ভব ঘটিয়াছিল। তাহার ফলে, কতজন কত কথা বলিলেন,বলিতেছেন এবং ভবিষ্যতেও বলিবেন। তাহাতে কবিতার প্রকৃতসত্তা (entity) বিচলিত হইবার নহে।
গোলাপ লইয়া রাজকবি কী লিখিলেন, আর কবিরাজ কী ঔষধ বানাইলেন, --তাহা গোলাপের বিবেচ্য নহে। তাহার অভিপ্রায় : ফুটিয়া উঠা। কবিতাও তদ্রsপ। এমনকি কখনো কখনো সে কবির অভিপ্রায়কেও অমান্য করে। --সেই ক্ষেত্রে, কবিতা-বিচারককে মান্য করিবার কথা মনে না-ও থাকিতে পারে। মনে রাখিতে হইবে, কবিতারোগ যখন পযৎড়হরপ হইয়া উঠে, তখন ডাক্তার অপেক্ষা নার্সেরই প্রয়োজন বেশি।
৪.
পশ্চিমা রেনেসাঁসের সুুবাদে, মানবতাবিরোধী দাসপ্রথা বিলুপ্তির পক্ষে যাঁহারা সোচ্চার --দেখা গিয়াছে, তাঁহাদের অনেকেই কবিতার মাথায় দাসত্বের বোঝা চাপাইয়া দিতে উৎসাহ প্রকাশ করিয়াছেন। স্থূল প্রয়োজন মিটাইবার স্বার্থেও তাঁহারা কবিতার সক্রিয়তা দাবি করিয়াছেন। পারিলে তাঁহারা মান্না দে-কে দিয়াও ভোটের গান গাওয়াইতেন! -রাজকীর্তন করাইতেন।
ইত্যাকার হুকুমদারি এখনও চলিতেছে। অথচ, উপযোগবাদী এই ফতোয়াদানকারীরাই তাঁহাদের টবে ভিটামিন-সি-যুক্ত মরিচগাছ না লাগাইয়া ফুলের গাছ লাগান, -এমনকি অর্থহীন মানিপ্ল্যান্টও।
________________________________________________________
৩.
ভাগ্যিস, পঞ্চকোষের বদান্যতায় কবিতা নামক পদার্থের উদ্ভব ঘটিয়াছিল। তাহার ফলে, কতজন কত কথা বলিলেন,বলিতেছেন এবং ভবিষ্যতেও বলিবেন। তাহাতে কবিতার প্রকৃতসত্তা (entity) বিচলিত হইবার নহে।
গোলাপ লইয়া রাজকবি কী লিখিলেন, আর কবিরাজ কী ঔষধ বানাইলেন, --তাহা গোলাপের বিবেচ্য নহে। তাহার অভিপ্রায় : ফুটিয়া উঠা। কবিতাও তদ্রsপ। এমনকি কখনো কখনো সে কবির অভিপ্রায়কেও অমান্য করে। --সেই ক্ষেত্রে, কবিতা-বিচারককে মান্য করিবার কথা মনে না-ও থাকিতে পারে। মনে রাখিতে হইবে, কবিতারোগ যখন পযৎড়হরপ হইয়া উঠে, তখন ডাক্তার অপেক্ষা নার্সেরই প্রয়োজন বেশি।
৪.
পশ্চিমা রেনেসাঁসের সুুবাদে, মানবতাবিরোধী দাসপ্রথা বিলুপ্তির পক্ষে যাঁহারা সোচ্চার --দেখা গিয়াছে, তাঁহাদের অনেকেই কবিতার মাথায় দাসত্বের বোঝা চাপাইয়া দিতে উৎসাহ প্রকাশ করিয়াছেন। স্থূল প্রয়োজন মিটাইবার স্বার্থেও তাঁহারা কবিতার সক্রিয়তা দাবি করিয়াছেন। পারিলে তাঁহারা মান্না দে-কে দিয়াও ভোটের গান গাওয়াইতেন! -রাজকীর্তন করাইতেন।
ইত্যাকার হুকুমদারি এখনও চলিতেছে। অথচ, উপযোগবাদী এই ফতোয়াদানকারীরাই তাঁহাদের টবে ভিটামিন-সি-যুক্ত মরিচগাছ না লাগাইয়া ফুলের গাছ লাগান, -এমনকি অর্থহীন মানিপ্ল্যান্টও।
________________________________________________________
- ছহি বারাঙ্গনাকাব্য
--না, না, বকুল আপা সে না অগো মতো ভদ্দরলোক না-
অন্য কিসিমের লোক
শোকেস সমাজটারে মনেপ্রাণে খুব ঘৃণা করে ;
বড়লোকে যা যা কয় মোটে নাকি সাচ্চা নয়, ফাটাফুটা সকলের ঘরে।
সংসারজীবন মানে তলে তলে ভেজালের দোকানদারি করা
সাজানো বাক্সের কথা বড়লোকী চান-ফুল-নদী
সব নাকি বাকোয়াজ স্রেফ মনগড়া।
পাহাড় মুতলেই নাকি নদী হয়, ধুতুরা ফুলের গর্তে বিষ,
আসমানি চান্দের পেটে হারামির বাচ্চা দেখা যায়,
ভদ্রমহিলাও চায় পাখিরা গুণ্ডার মতো মারে যেন শিস।
ভদ্রঘরে ঘরই থাকে, ঘরণি যে কোন্খানে থাকে !
জড়োয়া-গয়নার মতো স্বামীরে জড়ায়া বুকে অন্যপুরুষের ছবি আঁকে,
আমগোই ভেজাল নাই, সংসার-নাটক নাই, নাই বাড়িঘর ;
কলঙ্ক-কাজল মাখি দুই চক্ষু মেইল্যা রাখি, আমরা দেখি দুনিয়া সোন্দর।
তার কথা শুনি আর জাল বুনি, জালের ভিতর
অনেক দূরের গাঙে অচিন মাছের ঘাই -আমি কাঁইপ্যা উঠি থরথর।
আরও কতো কথা সে যে বুঝায় আমারে......
-চুপ্ কর বেকুব মাইয়া! যতই বাজুক বাঁশি, সব বাঁশি একই বাঁশঝাড়ে।
এই সব পিতলা কথা দিয়া
চুদুরবুদুর কইরা তরে বুঝি পটকান মারে ?
ট্যাকাকড়ি আনে কিছু -নাকি খালি হাতায়-হুতায় ?
কাজ নাই কাম নাই আকামের কথা কয় বেশি -
বহুত দেখ্ছি চান, এ-রকম পোলাপান দুঃখদুঃখ ভাব লইয়া আসে ;
ঘোর কাইট্যা গেলে ঠিকই ঘোমটা-পরা মাগী ঘরে পুষে,
বৎসর গড়াইয়া গেলে বাপে-পুতে একলগে বেতগুলা চুষে।
হুন, তরে কইয়া রাখি শিমু,
এইবার যদি চান এইথান আহে
আমারে খবর দিস, বিষ ঝাইড়া দিমু।
যা-ই কও বকুল আপা, ট্যাকাকড়ি হগলে তো দেয় ;
তয় সে যা দিছে মোরে খুব ভোরে যেন টের পাই-
শরীল ছাড়াও আছে আন্ধারের আরেক রোশনাই।
আচমকা কারেন্ট গেলে আমারে চেরাগবাত্তি কয়,
আমি টের পাই
মোমের কান্নার মতো আমার ভিতরে তার ক্ষয়।
-বুঝিরে বুঝিরে বইন, বেচৈন আমারও গেছে দিন;
শেষমেষ বুঝলাম -ইঁদুরের গর্ত ছাড়া আমাগোর নাই কোনো চিন।
দেশের-দশের মইধ্যে থাইক্যাও আমরা তবু নাই
আমাগোর জনমই বেহুদা ;
আমাগো দুঃখের কথা বুঝনের কোনো কেউ নাই,
আমাগো সংসার নাই, সমাজ-সংসদ নাই, আছে খালি ক্ষুধা।
-তোমার কথাও ঠিক। তবু তার কথা মনে লয়,
বুকের ঝাঁপির থেইক্যা সাপের মতন লম্বা নিশ্বাস বারোয় ;
বস্তির পুরানা চান্দে মন কাঁন্দে, চক্ষে নামে মেঘ,
শরীলেও ঘুণ ধরে, আরও সত্য মনের আবেগ।
আমারে বুঝায়া দিছে নানা রকমের ক্ষুধা, ক্ষুধার আগুন ;
তামাম দুনিয়া জুড়ে কোনখানে সুখ নাই,
দুঃখ হইল জীবনের নুন।
১২.৭.১০
________________________________________________________
৫.
জরিপ করিলে দেখা যাইবে, ইহাদের অধিকাংশই অকবি এবং অধ্যাপক-প্রজাতির মানুষ। অঙ্গব্যবচ্ছেদ-বিদ্যানুযায়ী তাঁহারা কবিতার লিঙ্গ হইতে আরম্ভ করিয়া নাড়িভুঁড়ি সমস্ত বাহির করিয়া আনেন; হৃৎপি- দেখাইয়া দেন, অথচ হৃদয় দেখাইতে পারেন না।
ইহার ফল কী দাঁড়াইয়াছে? -বড়জোর ফলাফলনিষ্ঠ কিছু ছাত্র পয়দা হইয়াছে, ছাত্রদিগের অনুশীলনী একত্র করিয়া একশ্রেণীর শিক্ষক উর্পাজনমুখী গবেষকও হইয়াছেন। কবিতা যে সমালোচনার গর্ভ হইতে জন্ম লয় নাই, -এই সত্য অবগত হইয়াও তাঁহারা সাহিত্যের নীতি-নির্ধারণে তৎপর; এমনকি আইন-প্রণয়নেও তাঁহাদের অনীহা নাই।
কিন্তু আমার বিশ্বাস, শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজন ব্যতিরেকে যাঁহারা সাহিত্যপাঠ করিয়া থাকেন, যাঁহারা নিছক পাণ্ডিত্য ফলাইবার জন্য কাব্যালোচনা করেন না, -তাঁহারাই প্রকৃত পাঠক, প্রকৃত সাহিত্যপ্রেমিক।
ক্ষুধা লগিলে ডালভাতই দরকার; ‘রান্না খাদ্য পুষ্টি’ জাতীয় গ্রন্থ তখন কোন কাজে আসিবে না। সেইরূপ, সাঁতার-শিক্ষামূলক নিবন্ধ পাঠ করিয়া কস্মিনকালেও সাঁতার কাটিবার আনন্দ পাওয়া যাইবে না। হালে গবেষণা-সাহিত্য নামক এক প্রকার তেলাপোকা ভীষণ উড়িতেছে, তাই বলিয়া তাহা পাখি নহে; -কেরোসিন তেলও আতর নহে, জ্বালানি মাত্র।
যাঁহারা বিদ্যা ফলাইবার জন্য কিংবা তরক্কি-সাধনকল্পে মুদ্রিত কাগজের জঞ্জাল বাড়াইতেছেন, -লক্ষ করিলে দেখা যাইবে -উহাদের অধিকাংশই মল্লিনাথের বংশধর, কালিদাস নহে।
কবিতা লইয়া মাস্টারি করা অপেক্ষা কবিতারচনা যে দুরূহ ব্যাপার -মাস্টার হইয়াও জীবনানন্দ তাহা বুঝাইয়া দিয়াছেন, এবং বুঝাইয়া দিয়াছেন কবিতা-আকারে। কীভাবে তাহা সম্ভব হইল ? -এই কারণে যে, প্রথমত এবং প্রধানত তিনি কবি, এবং কবিতা তাঁহার নেশা। তাঁহার ‘সমারূঢ়’ কবিতাটি যাঁহাদের শ্রীচরণে নিবেদিত, তাঁহারা প্রধানত অধ্যাপক এবং কবিতা তাঁহাদের পেশা।
না, ভুলিয়া যাই নাই; -বায়বীয় ভাবালুতা হইতে বাংলাকবিতাকে উদ্ধার করিবার কাজে যাঁহারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন, তাঁহাদের অনেকে অধ্যাপক। সেই সঙ্গে ইহাও মনে রাখিয়াছি যে, আদিতে তাঁহারা কবিই ছিলেন, অধ্যাপক নহে।
_________________________________________________________
- দেখা
তখন বুঝিনি আমি হারিয়েছি, -কী কী হারিয়েছি।
-জামার বোতাম থেকে শুরু করে ঘন দৃষ্টিপাত,
সর্বশেষ প্রতিশ্রুতি।
পেছনে তাকিয়ে দেখি দীর্ঘশ্বাস, সবুজের বিষণœ ছায়ায়
রোদের করুণ হাসি, সর্বশেষ অতীত আমার।
ঝাউবনে লেগেছে বাতাস, দূরের সমুদ্রে ঢেউ, পাহাড়েও হাতছানি তার।
আয়নায় ধরেছি মেলে নিজ মুখ -কেবল প্রচ্ছদ
পাণ্ডুলিপি চলে গেছে সমুদ্রের কাছে। খুঁজি তাকে বার বার,
নিজের মনের সঙ্গে একটু দেখাও আজ হলো না আমার।
১৪.০৮.১২
__________________________________________________________
৬.
শ্রদ্ধেয় পাঠক, আমাকে ভুল বুঝিবেন না। কবিতা লইয়া কথা বলিবার অধিকার কবি ব্যতিরেকে আর কাহারও নাই -এই কথা কস্মিনকালেও আমি বলিব না, কেহ বলিলে মানিবও না। আমার কথা হইল, কবিতার সহমর্মী না হইয়া কবিতার মর্মার্থ লইয়া যেন ওয়াজ-নসিহত না করি, স্ববিরোধী মনোবৃত্তির প্লেটোর ন্যায় যাহাতে হুকুমদারি না করি; কমপক্ষে এরিস্টোলের ন্যায় যেন সহানুভূতিশীল হইয়া উঠিতে পারি। -ইহাই আমার কাম্য।
প্রসঙ্গত আরেক অধ্যাপকের কথা মনে পড়িল। তিনি বলিয়াছেন -‘কবিতা এমন কী ! এ নিয়ে গবেষণা করার কী আছে?’ লক্ষণীয়, এই উক্তির মধ্যে কবিতার প্রতি তাচ্ছিল্যের মনোভাবই প্রকট। এই ব্যক্তি যে কবিতা-বিষয়ে গবেষণা করেন নাই, তাহার জন্য কবিতা তাঁহার কাছে ঋণী। কিন্তু এই বিজ্ঞ মানুষটি যখন শ্রেণীকক্ষে কবিতা পড়াইবেন, তখনকার কথা ভাবিয়া আমি আতঙ্কিত বোধ করিতেছি।
স্বীকার করি, পণ্ডিতের পক্ষে কাব্যামোদী হইয়া উঠিতে বাধা নাই; সেইরূপ কবির পক্ষেও পা-িত্য অর্জন অসম্ভব নহে। আসল সমস্যা হইল, পাণ্ডিত্যের উগ্র অহমিকায় কবিতা কিংবা কবিকে অবমূল্যায়ন করা হইতেছে কি-না।
৭.
অধ্যাপককুল-শিরোমণি অমলেন্দু বসু যথাসময়ে জীবনানন্দকে বুঝিতে পারেন নাই, বুঝিয়াছিলেন বুদ্ধদেব বসু -অধ্যাপক বলিয়া নহে, কবি বলিয়াই বুঝিতে পারিয়াছিলেন। কেবল বসু হইলেই হয় না, শান্তনু-গঙ্গার পুত্ররূপে জন্মিতে হয়। বিশ্বাস করি, অধ্যাপক অমলেন্দু বসু অমলেট খাইতে জানিতেন, কিন্তু মুর্গির ডিম ছাড়াও যে আরও অনেক জাতের ডিম থাকিতে পারে, জীবনানন্দের জীবদ্দশায় হয়তো তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারেন নাই। শুধু অমলেটপ্রিয় অমলেন্দু বসুকে দোষ দিয়া লাভ কী ! বিদ্যাসাগর হইয়াও তো ঈশ্বরচন্দ্র মধুসূদনকে বুঝিতে পারেন নাই, জাতীয়কবি হইয়াও হেমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে বুঝিতে পারেন নাই, রবীন্দ্রনাথ পারেন নাই বিষ্ণু দে-কে।
না পারিবার প্রধান কারণ এই যে, ‘কবিতা অনেক রকম’ -এই সহজ সত্যটি জীবনানন্দের আগে কেহই সম্যক উপলব্ধি করেন নাই।
অতএব, কবিতা যদি অনেক রকম হয়, কবিতা-ভাবনাও অনেক রকম হইবে। আজ যাহা ভাবিলাম, আগামীকালও যদি তাহা ভাবি, তাহা হইলে আগামীকালের কোন অর্থ থাকিল না। তাহাতে প্রতীয়মান হইবে, চিন্তার অগ্রগতি ঘটে নাই, ভাবনার স্থবিরতা কাটে নাই।
_______________________________________________________
৬.
শ্রদ্ধেয় পাঠক, আমাকে ভুল বুঝিবেন না। কবিতা লইয়া কথা বলিবার অধিকার কবি ব্যতিরেকে আর কাহারও নাই -এই কথা কস্মিনকালেও আমি বলিব না, কেহ বলিলে মানিবও না। আমার কথা হইল, কবিতার সহমর্মী না হইয়া কবিতার মর্মার্থ লইয়া যেন ওয়াজ-নসিহত না করি, স্ববিরোধী মনোবৃত্তির প্লেটোর ন্যায় যাহাতে হুকুমদারি না করি; কমপক্ষে এরিস্টোলের ন্যায় যেন সহানুভূতিশীল হইয়া উঠিতে পারি। -ইহাই আমার কাম্য।
প্রসঙ্গত আরেক অধ্যাপকের কথা মনে পড়িল। তিনি বলিয়াছেন -‘কবিতা এমন কী ! এ নিয়ে গবেষণা করার কী আছে?’ লক্ষণীয়, এই উক্তির মধ্যে কবিতার প্রতি তাচ্ছিল্যের মনোভাবই প্রকট। এই ব্যক্তি যে কবিতা-বিষয়ে গবেষণা করেন নাই, তাহার জন্য কবিতা তাঁহার কাছে ঋণী। কিন্তু এই বিজ্ঞ মানুষটি যখন শ্রেণীকক্ষে কবিতা পড়াইবেন, তখনকার কথা ভাবিয়া আমি আতঙ্কিত বোধ করিতেছি।
স্বীকার করি, পণ্ডিতের পক্ষে কাব্যামোদী হইয়া উঠিতে বাধা নাই; সেইরূপ কবির পক্ষেও পা-িত্য অর্জন অসম্ভব নহে। আসল সমস্যা হইল, পাণ্ডিত্যের উগ্র অহমিকায় কবিতা কিংবা কবিকে অবমূল্যায়ন করা হইতেছে কি-না।
৭.
অধ্যাপককুল-শিরোমণি অমলেন্দু বসু যথাসময়ে জীবনানন্দকে বুঝিতে পারেন নাই, বুঝিয়াছিলেন বুদ্ধদেব বসু -অধ্যাপক বলিয়া নহে, কবি বলিয়াই বুঝিতে পারিয়াছিলেন। কেবল বসু হইলেই হয় না, শান্তনু-গঙ্গার পুত্ররূপে জন্মিতে হয়। বিশ্বাস করি, অধ্যাপক অমলেন্দু বসু অমলেট খাইতে জানিতেন, কিন্তু মুর্গির ডিম ছাড়াও যে আরও অনেক জাতের ডিম থাকিতে পারে, জীবনানন্দের জীবদ্দশায় হয়তো তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারেন নাই। শুধু অমলেটপ্রিয় অমলেন্দু বসুকে দোষ দিয়া লাভ কী ! বিদ্যাসাগর হইয়াও তো ঈশ্বরচন্দ্র মধুসূদনকে বুঝিতে পারেন নাই, জাতীয়কবি হইয়াও হেমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে বুঝিতে পারেন নাই, রবীন্দ্রনাথ পারেন নাই বিষ্ণু দে-কে।
না পারিবার প্রধান কারণ এই যে, ‘কবিতা অনেক রকম’ -এই সহজ সত্যটি জীবনানন্দের আগে কেহই সম্যক উপলব্ধি করেন নাই।
অতএব, কবিতা যদি অনেক রকম হয়, কবিতা-ভাবনাও অনেক রকম হইবে। আজ যাহা ভাবিলাম, আগামীকালও যদি তাহা ভাবি, তাহা হইলে আগামীকালের কোন অর্থ থাকিল না। তাহাতে প্রতীয়মান হইবে, চিন্তার অগ্রগতি ঘটে নাই, ভাবনার স্থবিরতা কাটে নাই।
_______________________________________________________
- পাথরঘাটার কবিতা
একদিন, সমুদ্রের নীল চোখ দূরতর মিরান্দার দেশে
নবকুমারের বেশে ছুটে গেছ চুম্বক-নেশায়। আজ বেলাশেষে
কী খুঁজে বেড়াও তুমি দো-আঁশ মাটির কাছে এসে
লতায়পাতায় ? তুমি কি সে-পলাতক প্রাচীন হরিণ
যার শিঙে লেগে আছে সবুজ গন্ধের স্মৃতি, বিরহের ঋণ ?
কে যেন বর্ষার মেঘ জমা রেখে গিয়েছিল পুরাতন বইয়ের পাতায়,
এখনও ঘরের মাঝে বুক-পকেটের কাছে মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাত ঘটে।
অনিদ্র রাতের জানালায়
ব্যঞ্জনবর্ণের শেষে চন্দ্রবিন্দু জেগে থাকে কার অপেক্ষায় !
এখনও বর্ষার দিনে ছাদের সিঁড়ির পাশে কুনোব্যাঙ আসে;
আজও সেই অক্ষমতা ব্যাখ্যাহীন বাংলা কবিতার
বাঙালি চরণ চোখে ভাসে।
চলে গিয়েছিলে তুমি মিরান্দার দেশে, তবুও কেন ফিরে ফিরে এসে
যুগলচরণ-শব্দে লতায়পাতায়
পুরোনো দু‘আনি খোঁজো গোলাকার সিকি মমতায়!
তোমার বাড়ির ছাদে এখনও কে বিকেলবেলায়
ঘুড়িহীন লাটাই ঘোরায় ? কেন জল জমে থাকে চিকরাশি গাছের গোড়ায়,
পাথরঘাটার মতো শ্যাওলা-রং বাংলা কবিতায়!
পড়ন্ত বিকেলে আজ পুরোনো সে-কবিতার মানে :
পাথরঘাটাকে কেউ পাথর বলো না,
পাথর পাথর নয় সবুজ শ্যাওলার মেয়ে জানে।
১৩.৪.১৩
_________________________________________________________
৮.
কবিতা ও কবিতা-ভাবনা যে একাধিকবার বদলাইতে পারে তাহার উজ্জ্বল প্রমাণ রবীন্দ্রনাথে বিদ্যমান। আদিপর্বে তিনি কবিতাকে ‘দেশাচারের দাসত্ব’ হইতে মুক্ত রাখিবার প্রত্যয় ব্যক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু, বঙ্গভঙ্গের অভিঘাতে তাঁহাকে বিপরীত অঙ্গীকার ব্যক্ত করিতে হইল। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিপরীত মতাবলম্বীদের বিপক্ষে দাঁড়াইয়া এককালে কবিতার অস্পষ্টতার পক্ষে চমৎকার সব কথা বলিয়াছেন তিনি। আবার, বিশ শতকের তৃতীয় দশক হইতে কবিতা যখন কলাকৌশলগত কারণে দুর্বোধ্য তথা অস্পষ্ট হইয়া উঠিতে লাগিল, তখন তিনি সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে পারেন নাই। অথচ, শেষপর্বের কবিতায় তিনিই আবার তিরিশের উপরতলীয় বৈশিষ্ট্যকে আত্মীয় করিয়া লইলেন।
অন্যদিকে, যিনি তিরিশের কাব্যান্দোলনের সঙ্গে পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, সেই জীবনানন্দও কি তিরিশের সব অঙ্গীকার মান্য করিয়াছিলেন ? --করেন নাই। করেন নাই বলিয়াই সাধু সর্বনাম সাধু ক্রিয়াপদ স্বেচ্ছায় ব্যবহার করিয়াছিলেন; করেন নাই বলিয়াই ‘রূপসী বাংলা’ লিখিতে পারিয়াছিলেন।
________________________________________________________
৮.
কবিতা ও কবিতা-ভাবনা যে একাধিকবার বদলাইতে পারে তাহার উজ্জ্বল প্রমাণ রবীন্দ্রনাথে বিদ্যমান। আদিপর্বে তিনি কবিতাকে ‘দেশাচারের দাসত্ব’ হইতে মুক্ত রাখিবার প্রত্যয় ব্যক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু, বঙ্গভঙ্গের অভিঘাতে তাঁহাকে বিপরীত অঙ্গীকার ব্যক্ত করিতে হইল। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিপরীত মতাবলম্বীদের বিপক্ষে দাঁড়াইয়া এককালে কবিতার অস্পষ্টতার পক্ষে চমৎকার সব কথা বলিয়াছেন তিনি। আবার, বিশ শতকের তৃতীয় দশক হইতে কবিতা যখন কলাকৌশলগত কারণে দুর্বোধ্য তথা অস্পষ্ট হইয়া উঠিতে লাগিল, তখন তিনি সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে পারেন নাই। অথচ, শেষপর্বের কবিতায় তিনিই আবার তিরিশের উপরতলীয় বৈশিষ্ট্যকে আত্মীয় করিয়া লইলেন।
অন্যদিকে, যিনি তিরিশের কাব্যান্দোলনের সঙ্গে পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, সেই জীবনানন্দও কি তিরিশের সব অঙ্গীকার মান্য করিয়াছিলেন ? --করেন নাই। করেন নাই বলিয়াই সাধু সর্বনাম সাধু ক্রিয়াপদ স্বেচ্ছায় ব্যবহার করিয়াছিলেন; করেন নাই বলিয়াই ‘রূপসী বাংলা’ লিখিতে পারিয়াছিলেন।
________________________________________________________
- সে-রাতের জুয়াখেলা
আশি কি একাশি সালে কোনো এক রাতের টেবিলে
বুকের বোতাম খুলে সে-কি আড্ডা তরল অঙ্গারে,
অসংখ্য পেরেকবিদ্ধ সেগুনের মৃত মাংস পেয়েছিল ফিরে
মরে যাওয়া বৃক্ষের জীবন।
সে গাছের ডালে বসে আমরা ক’জন পাখি
প্রেমিকার নীলডিম গুণছি যখন,
সে-রাতেই পালিয়েছে আমার প্রেমিকা
ঘাসের ঘটনা ছেড়ে উঠে আসা আবিদের চক্ষু আসে বুঁজে,
শিহাব কিরাতবংশ, তবু কেন ক্ষত্রিয়ের তরবারি খোঁজে!
তখন পর্যন্ত কিন্তু আমাদের রটনা ছিল না,
-কী নাম, কী নাম প্রেমিকার?
জিজ্ঞাসার সূত্র ধরে পুরোনো সে খয়েরি জামার
কোথায় রক্তের দাগ, আগুনের গোলাপ ফুটেছে।
হঠাৎ কোথায় যেন আকাশের হৃৎপি- খসে গেল উল্কার মতন
নিজের হাতেই আমি ছাই করে উড়িয়ে দিয়েছি
সুতো ছিঁড়ে কাটাঘুড়ি প্রেমিকা আমার
ঘরে ফিরে শুধু অন্ধকার
কী যেন এসেছি ফেলে, সারাঘর করি তোলপাড়।
কেউ না বুঝুক বন্ধু, সে কী কষ্ট তুমি তো বুঝেছো-
তেরো কার্ডে কত দুঃখ যখন থাকে না হাতে নিজস্ব জোকার।
সে রাতের মৃত দেহ বয়ে
আমি আজও ডুবে আছি নীল জলাশয়ে।
যদি চাও নীলপদ্ম আরও দিতে পারি,
তোমার সংসার নেই,আমারও তো নেই ঘরবাড়ি।
২২.১২.২০১২
ট্রাক-দুর্ঘটনা ২
বাঁধাধরা রাস্তা ধরে চলতে চলতে জীবনটা বিষিয়ে গেছে
মোড়ে মোড়ে লাল চক্ষু আমাকে শাসায়
মাঝেমধ্যে মন ভরে হাওয়া খেতে ইচ্ছে করে
ঢালু পথ বেয়ে নেমে পড়ি সর্ষে খেতে, জলে ও জঙ্গলে
ঝুঁকেপড়া কৃষ্ণচূড়ার লালে চুমু খেতে খুব ইচ্ছে করে
তারপর থানছির নদী-জলে ডুব মেরে গা ভিজিয়ে আসি
মনে পড়ে একবার জনশূন্য রাস্তা থেকে আমি
পালিয়ে যাওয়া
একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকাকে
পৌঁছে দিতে পেরেছিলাম স্বপ্নের শহরে।
সেই থেকে আমার মন কেমন কেমন জানি করে
ইচ্ছে করে নিয়ন্ত্রণ হারাই ইচ্ছেকরে
নিঃসঙ্গ রাস্তার মধ্যে পড়ে থাকি আহতের মতো
যেন
আমাকে বিবাহ করে নিয়ে যায় কোনো এক স্বাস্থ্যবান ট্রাক
১৮.২.২০১৩
__________________________________________________________
৯.
সময় বদলাবেই। ভৌতপরিবেশের পরিবর্তন চলিতেই থাকিবে। আত্মাটুকু ধরিয়া রাখিয়া কবিতাও বদলাইবে, কবিতা-ভাবনাও বিবর্তিত হইবে। -মূল কথা : অনেক রকম হইবে। যে বৃদ্ধাঙ্গুলি ব্যতিরেকে লেখনী ধারণ করিতে পারি না, সেই বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপও পৃথিবীর কোন দুইজন মানুষের এক রকম নহে। অতএব, ব্যক্তিভেদে কবিতাও ভিন্ন হইবে -আইন করিয়াও তাহাকে এক করা যাইবে না। ভীত হওয়ার কারণ নাই; ইহাতে কবিতার কাব্য-পরিচয় ক্ষুণ্ন হইবার কোন আশঙকা নাই।
১৮.৬.২০১৩
ময়ুখ চৌধুরীর কবিতা ও কবিতা-ভাবনা নিয়ে এই লেখাটি ছাপাতে পেরে চিহ্ন আনন্দিত।
ReplyDelete