Wednesday, September 4, 2013

চিহ্ন ।। ২৫-এ রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত কবিতা





































                        



সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
রুমা ঠাকুর


 









রবি ঠাকুরকে তিন বার কষ্ট দিয়েছিলো রুমা ঠাকুর। সেই কষ্টে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
এ কথা কেউ জানে না, কোথাও কোনো তথ্য নেই, মিউজিয়ামেও না। এটা একান্ত ব্যক্তিগত গোপন কথা। ভালো রবীন্দ্রনাথ নয়; মন্দ রবীন্দ্রনাথ মানে নির্মলেন্দু গুণও রুমা ঠাকুরের জন্য তিন বার কেঁদেছিলেন।
কোলকাতা আমাকে খুব টানে। ঢাকার বন্ধুদের চেয়ে কোলকাতার কবিবন্ধুদের আড্ডায় প্রাণ পাই।
আমি এবার কানাডা থেকে কোলকাতায় যাবো। তবে কবিবন্ধুদের জন্য নয়। রুমা ঠাকুরের খোঁজে। ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে আমি তাকে ঠিকই পাবো। পেয়ে যাবো। পেলে হয়তো খুন করবো, ক্ষমা করবো না।
মনের গোপন খুনের মটিভ টের পেয়ে ঘসেটি বেগম সিরাজের কথা মনে করিয়ে দিয়ে জানালো, ‘অল্পতেই ১০০ থাকে’; এক রুমা ঠাকুরের রক্তের ফোঁটা থেকে ফুটে উঠবে একশ’ রুমা ঠাকুর। তখন কাঁদবে লক্ষ লক্ষ নকল রবীন্দ্রনাথ। অনশনকারীদের মতো অসুস্থ হয়ে পড়েবে বাংলা কবিতা।


জোড়াসাঁকো

রবীন্দ্রনাথের নেশায় তুমি তীব্র তীর ছুটে যাচ্ছো আজিজ মার্কেট থেকে নিউ মার্কেট।
ছুটে যাচ্ছো পাঠশালা থেকে শান্তিনিকেতন, জোড়াসাঁকো।
ভ্যাঙ্কুভারে ঠাকুরের সাথে একবার দেখা হয়েছিলো সেই ১৯২৯ সালে-
জানতে চেয়েছিলেন তোমার কথা। তোমার সাথে কি দেখা হয়নি কখনো?
দীঘল চুলে, শাড়ির আঁচলে স্বর্ণলতায় জড়ানো গীতাঞ্জলির গানগুলো বুনোফুলের মতো
ঘ্রাণ ছড়ায় তোমার বিভোর করা স্তনে, বুকের মাঝখানে জোড়াসাঁকো।
তোমার ভেতরে তীব্র রবীন্দ্রঅগ্নি ও আগুন। আমাকে আলোকিত করো প্রাণের পরশে
অগ্নিতে পুড়ে ছাড়খার-ছাই করে দিও না আমাদের শান্তিনিকেতন!


চুলের নিচে ঘুমন্ত রাত্রির ক্লান্তি

রবীন্দ্রনাথ আর আমার সাথে খুব মিল আছে, আছে আমাদের একই কষ্ট। আমরা কেউ দেখতে পাই নি রুমা ঠাকুরের মেঘলা দীঘল চুল, চুলের ঢেউ। জানি না তার চুলের ভাষা। তবু রুমা ঠাকুরের দীর্ঘ দীঘল চুলের ঘ্রাণ আর ফুলের সৌরভ একাকার, টের পাই। চুলের ঘ্রাণে আর ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না রাত্রির। তোমার চুলের নিচে ঘুমিয়ে থাকে রাত্রির ক্লান্তি।
জানি না তার চুলের ভাষা ও বর্ণমালা। জানি না ব্যাকরণ, জানি না বৃহস্পতিবার নারকেল তেলের আদর কি ভাবে চুলচর্চায় আমাদের ঈর্ষা জাগায়!!
রুমা ঠাকুরের দীর্ঘ দীঘল চুলে আমাদের নদী ঢেউ তোলে। কিন্তু আমার ছোট ডিঙি কিংবা রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী ভাসবে না রুমা ঠাকুরের খেয়াঘাটে। কারণ, সেই নদীতে নৌকা বাইচের উৎসব। সেই নোঙরে অনেক পানসির প্রতিযোগিতায় আমাদের সোনার তরী, আমাদের রূপার তরী ফিরে যাবে ভ্যাঙ্কুভারে। তার চেয়ে আমাদের ছোট নদীর ছোট ডিঙি, সোনার তরী পুঁজিবাদী সপ্তম নৌবহরকে প্রতিহত করবে।
তখন সেলাই দিদিমণিরা পায়ে নূপুর পরে কলসী নিয়ে ঘাটে যাবে। আর রুমা ঠাকুরেরা বাংলা সাহিত্যের বারান্দায় বসে চুলে চর্চা করবে- বাঁধবে বেণী কিংবা খোঁপা। ফুল-ফিতায় ভরে উঠলে চুলের স্বপ্নসমুহ।



মাসুদ খান
বাংলা ভাষা





  • বাংলা ভাষার যে আধুনিক গড়ন, তার গোড়াপত্তন তাঁরই হাতে। একে আরো বিকশিত করে তুলবেন, আরো উৎকর্ষের দিকে নিয়ে যাবেন ভবিষ্যতের প্রতিভাগণ-এ ছিল তাঁর আশা ও বিশ্বাস। তিনি জানতেন-ভাষা বহতা নদীর মতো। বহমানতা আর বদলে বদলে যাওয়ার মধ্যেই নিহিত এর শক্তি ও সম্ভাবনা।... রবীন্দ্রনাথ, সেই মহোচ্চ প্রতিভার উদ্দেশে নিবেদিত আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস...


নীল নীলিমার নীল

রৌদ্রঝিলমিল
বটবৃক্ষের ছায়া
জ্যোৎস্নারাতের মায়া
বনের অম্লজান
অভিকর্ষের টান
দলকলসের মৌ
মাঠের সবুজ ঢেউ
চাঁদনি রাতের সুর
বেদনা-মধুর
কালবোশেখির ক্রোধ
কমলা-পাকা রোদ
মেঘের বরাভয়
ঘুঘু-ডাকের লয়
পাখির কলগান
পাগলাঝোরার তান
বৃষ্টিপাতের যতি
ইচ্ছামতীর গতি
নদীর বাঁকা জল
ঢেউয়ের ছলাৎছল
শিশুর চোখের হাসি
সোনাধান্যরাশি-
জিনিয়ে ছিনিয়ে সব
গড়ছো অবয়ব
বাংলা এ-ভাষার
আমার বাংলা মা-র।


সময়যানে চ’ড়ে
অনেক কাল ধ’রে
গ্রহান্তর ঘুরে
বহু জন্ম পরে
আসবো যখন ফিরে
পুনর্ভবার তীরে
চোখ মেলবো ভয়ে
দেখবো অবাক হয়ে-
বদলে গেছে খুব
মায়ের, ভাষার রূপ।


ভাববো কিছুক্ষণ-
কেই-বা সেইজন,
কোন-সে কবির তেজে
নতুন সাজে সেজে
জ্বালিয়ে নতুন আশা
এলো বাংলাভাষা
সুর-স্বর-ভাব যত
পাল্টে অবিরত!
কোন-সে বর্তিকায়
কোন আলো-আভায়
এমন জ্যোতির্মতী
হলেন সরস্বতী!





খালেদ হোসাইন
তুমিই রবীন্দ্রনাথ








 



চারিদিকে
কেবল জান্তব গন্ধ কেবল পাশব হুঙ্কার
হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে আসে
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে ক্ষার।
নিঃসীম অন্ধকারে তুমি শুধু এক-চিলতে আলো
তুমিই রবীন্দ্রনাথ, তুমি শুধু গন্ধসুধা ঢালো।
ওরা কারা ধেয়ে আসে-বিষবাষ্পে ভরে চরাচর?
লোকালয় সন্ত্রস্ত- মাতৃভূমি কাঁপে থরথর;
রক্তভেজা এ মাটিতে মনুষ্যত্ব শুধু পিছলে যায়
ছড়ায় বারুদ-গন্ধ চিরন্তন ভোরের  হাওয়ায়।
নিঃসীম অন্ধকারে তুমি শুধু এক-চিলতে আলো
তুমিই রবীন্দ্রনাথ, তুমি শুধু গন্ধসুধা ঢালো।








বায়তুল্লাহ কাদেরী
রবীন্দ্রনাথ ও ক্লান্তি










১.
এবং রবীন্দ্রনাথ যতবার তাকে পেয়ে যাই সেমিনারে
ওতি শ্মশ্রুময় কিংবা চারুর লতিয়ে ওঠা  লবেজান দেহে
অমলের লালবাতিজ্বলা বিলেতের চিঠির-ক্লান্তির সন্দেহে
তখন কি একবারও গুরুদেব আসো তুমি সংসারের পারে?
যেখানে কম্পিত-আত্মা ভূপতীয় সম্পাদকীয়ের শশময়
যাপিত ব্যস্ততাকাল কিন্তু আমিতো এখন অবিমৃশ্যময়
এক সময়ের হাতে বন্দী. বালিকারাশির পরিখাকিনারে
তোমার রূপের মাঝি কায়হীন সমব্যথী সময়ের স্নেহে।
বাস্তবিক বৈষাকরণিক। ‘এসো হে বৈশাখ’ বলে অবিরাম
জলভূমি ধরে ভেসে যাই যেরকম হাঁস কিংবা নৌকো
ওতি ক্ষুদ্র ভাসে দূরবর্তী ক্লান্তির রবীন্দ্রনাথ বিধি রাম.
আমি তথৈবচ. রয়েছি বঙ্গাল-জীবনের একখণ্ড চৌকো
শিলার উপরে দুঃখী চারুলতা। আর তোমার হৃদয় ধরে
চিদাকাশ দেখি অমলমেঘের : ভস্মীভূত ভূপতির ঘরে।
২.
তাহলে মৃণাল তুমি বল পুঁতিগন্ধময় অন্দরমহল
যাকে তুমি ছেড়ে গেছ-নীলাম্বরী ছিঁড়ে বারংবার কী অদ্ভুত
সেখানেই লেখ নীল পত্রখানা! অহরহ হেফাজতি ভূত
সন্ধ্যায় গভীরভাবে নামে বাড়িটায় আর করে কোলাহল।
আমি জানি গুরুদেব, একদা রবীন্দ্রনাথ-কাদম্বরীর সম্বল
জোড়াসাঁকোর সমুদ্রে; জীবনপ্রতীকে ফেনা তুলে অসহায়
কী প্রকার উগরায় বিষ কী প্রকার ক্লান্তির মসীতে হায়
চন্দরামৃণালচারু উন্মথিত রক্তে কী ভীষণ উতরোল!
তোমার চিঠির ঘাম চুয়ে পড়ে বেলাভূমে অতি রাবীন্দ্রিক
মৃণাল হে। যে আঁধার গলিটাকে ভীতিহীন গিয়েছো মাড়িয়ে
সে যে এক অদ্ভুত বেড়াল! লজ্জাপিতজ্যোতি সে দেয় বাড়িয়ে,
বার বার আসে, দুধ খায় চুকচুক, যেন সুপ্রাচীন গ্রিক
ধূসর পুরাণাবৃত ক্লান্তির অমোঘ ট্রাজেডিতে সামগ্রিক
এক বিড়ালের পদচ্ছাপ, মৃণাল হে আজ ঠিকানা হারিয়ে মৃণাল হে, আজ ঠিকানা হারিয়ে।

No comments:

Post a Comment